প্রিয় বাবা

সামনে বাবা দিবস আসতেসে, কখনো তোমাকে বাবা দিবস উপলক্ষ্যে কিছু দেয়া হয়নি। আম্মুকে মা দিবস উপলক্ষ্যে কিছু না কিছু সব সময়ই দিতাম কিন্তু আমার তালিকা থেকে কিভাবে কিভাবে যেন তুমি বাদ পরে যেতে। আসলে আমার অজান্তে না তোমাকে ইচ্ছা করেই বাদ দিতাম। আব্বু তোমার মনে আছে আমি যখন ইন্টারে পড়ি তখন ঈদ উপলক্ষ্যে তোমাকে কালো রঙের ১টা পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছিলাম। পাঞ্জাবীটা তোমাকে দেবার পর তুমি বলেছিলা তোমার পছন্দ হয়নি, সেদিন খুব কেদেছিলাম। তখন থেকেই মনের ভিতর অভিমান জমা হয়ে গিয়েছিল, তারপর আর তোমাকে কখনো কিছু দেয়া হয়নি। কিন্তু আমার মনে আছে সেই ঈদে তুমি আমার দেয়া পাঞ্জাবীটা পরেই নামাজ পড়তে গিয়েছিলে, তখন খুব ভালো লেগেছিল। তারপরও কেন যে তোমাকে কিছু দেইনি তা এখন আর মনে করতে পারি না। তবে সেদিন তোমাকে থ্যাঙ্ক ইউ ও তো বলা হয়নি আমার পাঞ্জাবীটা পরার জন্য। আমি জানি সেই পাঞ্জাবীটা এখনও তুমি খুব যত্ন করে তুলে রেখেছ সেই কারনেও তোমাকে কখনো ধন্যবাদ দেইনি। আজ বরং তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। আজ তোমাকে চিঠী লেখার কারনও এটা যে কথাগুলো তোমাকে এতদিন বলিনি আজ বলবো।

আব্বু তোমার মনে আছে , ছোটবেলায় তোমার ফিল্ডে যাবার আগের রাতে সব সময় আমার জ্বর আসতো? তোমাকে ছেড়ে একা থাকবো কিভাবে মনের ভিতর সবসময় সেই ভয় থাকতো। আজ দেখেছ বাবা আমি কত বড় হয়ে গেছি… তোমাকে ২বছরের বেশি সময় ধরে দেখি না তারপরও জ্বর আসে না।তোমার কথা মনে হলে বুকের ভিতরে কোন একটা জায়গায় মোচড় দেয়, গলায় কি যেন আটকে যায়, একটা নোনা পানির ঢেকুর গিলতে হয়।

আব্বু তোমার মনে পরে আমি যখন প্রথম আলাদা ঘরে থাকা শুরু করলাম তখন একা ঘুমাতে খুব ভয় হতো, শুধু সুযোগ খুজতাম কিভাবে তোমাদের ঘরে ঘুমায় পরা যায়।কতবার ঘুমের ভান করে পরে থেকেছি তুমি তখন আমাকে কোলে করে আমাকে আমার বিছানায় শুইয়ে রেখে আসতে। পরে যখন আমি তোমাকে বললাম আমার একা ঘুমাতে ভয় লাগে তখন তুমি আমার ঘুমিয়ে পরা পর্যন্ত আমার পাশে বসে আমাকে কত গল্প শুনাতে- বিউটি এন্ড বিস্ট, সিন্ডারেলা, স্নো হোয়াইট আরো কত কি!! বাবা এখন যখন ঘুম আসে না তখন ইউটিউবে বসে বসে এই মুভিগুলো দেখি আর মনে করি তুমি আমার পাশে বসে গল্পগুলো বলছো।

তোমার মনে পরে তুমি আমাকে ছোটবেলায় আবুজি বলে ডাকতা। তুমি যখন খুব রাগ করতা তখন আমার নাম ধরে ডাকতা। পরে যখন সব সময় আমার নাম ধরে ডাকা শুরু করলা তখন খুব মন খারাপ লাগতো, মনে হত তুমি আমার থেকে খুব দূরে সরে যাচ্ছো।

আব্বু জানো ছোটবেলায় রেজাল্ট  খারাপ হলে কখনই এই ভেবে মন খারাপ হত না যে তুমি রাগ করবা বা বকা দিবা তখন এই ভেবেই মন খারাপ হতো যে তোমার আশা পুরন করতে পারলাম না। তখন তোমাকে বলা হয়নি,এখন বলি সরি বাবা। যখন অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেলাম তখন মনে হয়েছিল তোমাকে কিছু দিতে পারলাম।যখন তুমি তোমার অফিসের আমার স্কলারশিপের টাকাটা আমার হাতে দিলা তখন মনে হয়েছিল তোমাকে বলি বাবা এটা তোমারই প্রাপ্য।

আরো কত কিছু বলার আছে তোমাকে কিন্তু কেন যেন বলতে পারছি না। চোখে মনে হয় কোন সমস্যা হয়েছে, বার বার চোখে পানি এসে সব ঝাপ্সা করে দিচ্ছে।

তোমাকে কখনও বলা হয়নি একটা খুব গুরুত্বপুর্ন কথা- “তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।”

This entry was posted in চিঠি. Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান